যে পরোক্ষ কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয় এবং অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃ কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার সমান থাকে, তাকে মাইটোসিস বলে
এইভাবে মাইটোসিস ক্রমান্বয়ে চলতে থাকে।
সকল প্রকৃতকোষী জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে মাইটোসিসের মাধ্যমে
ক্যারিওকাইনেসিস :
কোষের নিউক্লিয়াসের বিভাজন কে বলা হয় ক্যারিওকাইনেসিস
সাইটোকাইনেসিস :
কোষের সাইটোপ্লাজম এর বিভাজন কে বলা হয় সাইটোকাইনেসিস
ইন্টারফেজ :
কোষ বিভাজনের পূর্বে কোষের প্রস্তুতিমূলক পর্যায়কে ইন্টারফেজ বলে। দুইবার মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মধ্যবর্তি পর্যায়কে প্রস্তুতি পর্যায় বা ইন্টারফেজ বলে।
মাইটোসিসের পর্যায় সমূহ
1. প্রোফেজ
১) কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয়
২) ক্রোমোজোম থেকে পানি হ্রাস পেতে থাকে, অর্থাৎ পানি কমতে থাকে।
৩) ক্রোমোজোম গুলো আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে খাটো ও মোটা হতে শুরু করে
৪) এই পর্যায়ে প্রতিটি ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার ব্যতীত লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড উৎপন্ন করে
৫) ক্রোমোজোমগুলো কুণ্ডলিত অবস্থায় থাকায় এদের সংখ্যা গণনা করা যায় না
2. প্রো-মেটাফেজ
১) এই পর্যায়ের প্রথমদিকে উদ্ভিদ কোষে কতগুলো তন্তুময় প্রোটিনের সমন্বয়ে দুই মেরু বিশিষ্ট স্পিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টি হয়। স্পিন্ডল যন্ত্রের তন্তুগুলো একমেরু থেকে অপর মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত, এদেরকে স্পিন্ডল তন্তু বলা হয়।
২) এই পর্যায়ে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার স্পিন্ডল যন্ত্র এর কিছু নির্দিষ্ট তন্তুর সাথে সংযুক্ত হয়, এই তন্তুগুলোকে আকর্ষন তন্তু বা ক্রোমোজোমাল তন্তু বলা হয়।
৩) ক্রোমোজোম গুলোকে সময়ে বিষুবীয় অঞ্চলে বিন্যস্ত হতে থাকে।
৪) প্রাণী কোষে স্পিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টিছাড়াও পূর্বে বিভক্ত সেন্ট্রিওল দুটি দুই মেরুতে অবস্থান করে।
৫) সেন্ট্রিওল দুটির চারদিক থেকে রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়, এদেরকে এস্টার রে বলে।
3. মেটাফেজ
১) এই পর্যায়ের প্রথমেই সব ক্রোমোজোম স্পিন্ডল যন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চলে অর্থাৎ দুই মেরুর মাঝখানে অবস্থান করে
২) প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার বিষুবীয় অঞ্চলে এবং বাহু দুটি মেরুমুখী হয়ে অবস্থান করে।
৩) এই পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলো সর্বাধিক খাটো ও মোটা হয়।
৪) প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটির মধ্যে আকর্ষণ কমে যায় এবং বিকর্ষণ শুরু হয়।
৫) এই পর্যায়ের শেষদিকে সেন্ট্রোমিয়ারের বিভাজন শুরু হয়।
৬) নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাস এর সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে।
4. অ্যানাফেজ
১) প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, ফলে ক্রোমাটিড দুটি আলাদা হয়ে পড়ে।
২) এই অবস্থায় প্রতিটি ক্রোমাটিডকে অপত্য ক্রোমোজোম বলে।
৩) অপত্য ক্রোমোজোম গুলি বিশ্বপ্রিয় অঞ্চল থেকে পরস্পর বিপরীত মেরুর দিকে সরে যেতে থাকে। অর্থাৎ অর্ধেক ক্রোমোজোম এক মেরুর দিকে এবং বাকি অর্ধেক অন্য মেরুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
৪) অপত্য ক্রোমোজোমের মেরু অভিমুখী চলনে সেন্ট্রোমিয়ার অগ্রগামী থাকে এবং বাহুদ্বয় অনুগামী হয়।
৫) সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোজোম গুলো V, L, J বা I এর মতো আকার ধারণ করে।
৬) এই পর্যায়ের শেষের দিকে অপত্য ক্রোমোজোম গুলো স্পিন্ডল যন্ত্রের মেরুপ্রান্তে অবস্থান নেয়।
5. টেলোফেজ
১) এই ধাপে প্রোফেজের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে বিপরীতভাবে ঘটে।
২) ক্রোমোজোম গুলোতে পানি যোজন ঘটতে থাকে।
৩) ক্রোমোজোম গুলো শুরু ও লম্বা আকার ধারণ করে। অবশেষে এরা জড়িয়ে গিয়ে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম গঠন করে।
৪) নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে।
৫) নিউক্লিয়ার রেটিকুলামকে ঘিরে পুনরায় নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এর সৃষ্টি হয়, ফলে দুই মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়।
৬) স্পিন্ডল যন্ত্রের কাঠামো ভেঙে পড়ে এবং তন্তুগুলো ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়।
Website: Biology Helpline
স্বাস্থ্য সুরক্ষায়